বনপাড়া ক্যাথলিক গীর্জা

মোঃ আব্দুস সালাম ,নাটোর জেলা প্রত্যেক জাতি ধর্মে থাকে মসজিদ,মন্দির, গীর্জা, প্যাগড়া বিভিন্ন উপাসনালয়। বনপাড়া এলাকার খ্রিস্টান ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয় বনপাড়া ক্যাথলিক গীর্জা। বর্তমানে এখানে নতুন-পুরাতন দুইটি গীর্জাঘর আছে। পাশে আছে লূদের রাণী মা মারীয়া সুবিশাল মূর্তি। পরিচালনা কর্তৃপক্ষের দ্বারা এটা পরিচালিত হয়। এদের দ্বারা এলাকার শিক্ষা-সংস্কৃতি,নারীর ক্ষমতায়ন, রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়।

ঐতিহ্যবাহী বড়াল নদীর দক্ষিণ পার্শ্বে বনপাড়া নামক একটি গ্রামে বনপাড়া ক্যাথলিক গীর্জা অবস্থিত। এখানে বনপাড়া ছাড়াও এলাকার আরও গ্রাম যেমন- কালিকাপুর, ভবানীপুর, শ্রীখন্ডি , হারোয়া,বাহিমালী, মানিকপুর, কুমরুল গ্রামেও খ্রিস্টধর্মালম্বী লোক বসবাস করে। খ্রিস্টান অধ্যুসিত এই এলাকা গুলোকে খ্রিস্ট ধর্ম পল্লী নামে পরিচিত। এই ধর্মপল্লীকে বলা হয় লূর্দের রাণী মা মারীয়া ধর্মপল্লী। এদের উপাসনালয় বনপাড়া ক্যাথলিক মিশন। খ্রিস্টধর্ম পরিচালনা কর্তৃপক্ষের দ্বারা এটা পরিচালিত হয়। কিন্তু মূল কেন্দ্র ভাটিকান বা রোমের খ্রিস্টমন্ডলীর দ্বারা এটা পরিচালিত হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়- ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের শেষেরদিকে খ্রিস্টান ধর্ম সম্প্রদায়ের লোকেরা বনপাড়া এলাকায় প্রথম বসতি স্থাপন করেন তিতুক্রশ, চার্লি কোড়াইয়া,মাইকেল কস্তা, টোনা কস্তা শিকারী, ফ্রান্সিস গমেজ কান্তা সহ অনেকে। অল্পদিনের মধ্যে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বহুলোক এই এলাকায় বসতি স্থাপন করে। বয়স্কদের মতে- ৭ ফেব্রæয়ারি ১৯২৭ খ্রিঃ কৃষ্ণনগর থেকে আসেন ফাদার এল মার্টিনেল্লী পিমে। ১৯৩০ খ্রিঃ ধানজুড়ি মিশন থেকে আসেন ফাদার জি অর্বাট পিমে। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ফাদার পি. কারনেভেকে প্রথম –পালপুরহিত করে "লূর্দের রাণী মা মারিয়া" নামে উৎস্বর্গকৃত একটি ধর্মপল্লী প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪০ সালের দিকে স্বগীয় ফাদার থমাস কাত্তানের (পিমে) ইতালীয়ান ধর্মযাজক ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এখানে বসতি স্থাপন করেন এবং ধর্ম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। কালক্রমে ধর্মের বিস্তৃতি বা প্রসার ঘটলে প্রার্থনার জন্য ১৯৫৮ সালে প্রথম যীশুর ক্রশযুক্ত কারুকার্যময় প্রথম গীর্জা স্থাপিত হয়, যা এখন পুরাতন র্গীজা নামে পরিচিত। নতুন আঙ্গিকে সুরম্য কারুকার্য খচিত নতুন গীর্জা নির্মিত হলে ৭ সেপ্টেম্বর ২০১২ খ্রিস্টাব্দে আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন বিশপ ফাদার জের্ভাস রোজারিও। র্গীজার সামনে ব্রটোর উপরে বাংলাদেশের দীর্ঘতম ৪০ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন লূর্দের রাণী মা মারিয়ার সুদৃশ্য মূর্তি বিদ্যমান।
এই ক্যাথলিক মিশনের অধিনে একটি হাইস্কুল( সেন্ট যোশেফস স্কুল এন্ড কলেজ), দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১। সেন্ট যোশেফস প্রাথমিক বিদ্যালয় –বনপাড়ায় এবং ২। ভবানী পুরে - সেন্ট জেভিয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয), একটি কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। হতদরিদ্র ও আদিবাসী ছাত্র/ ছাত্রীদের জন্য পৃথক পৃথক ছাত্র/ছাত্রীনিবাস করে গরীব শিক্ষার্থীদের সহায়তা করছে। একটি দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠিত করে স্বাস্থ্য সেবা ছাড়াও নিরাপদ মা ও শিশু সেবা প্রদান করা হয়।, দরিদ্র নারীদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের জন্য হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ দিয়ে মেয়েদের স্বাবলম্বী করছে। ক্যাথলিক ধর্মপল্লী কর্তৃপক্ষের দ্বারা বহু ব্রীজ-কালভাট সহ রাস্তা-ঘাট নির্মিত হচ্ছে। ধর্ম বিশ্বাসের ভিন্নতা সত্বেও এই এলাকার সকল ধর্মের মানুষ ধর্মীয় ও দেশীয় সংস্কৃতিতে সম্প্রীতির সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ।
বর্তমানে ফাদার দিনো জ্যাকোমিনেল্লী,পিমে ও ফাদার আন্তনী হাঁসদা নামের দুইজন পুরোহিত এই ধর্মপল্লী সফলতারসাথে পরিচালনা করছেন।

Comments