Sponsored ads go below

Wednesday, December 22, 2021

২১ ডিসেম্বর নাটোর মুক্ত দিবস পালন

natore bd
মো. আব্দুস সালাম  , নাটোর থেকে
১৯৭১ সালে ২১ ডিসেম্বর নাটোর মুক্ত দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজন করা হয় বিজয় শোভাযাত্রা, ফুলবাগান গণকবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
২১ ডিসেম্বর নাটোর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সনের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা সহ সারা দেশের বেশির ভাগ এলাকা মুক্ত হয়ে বিজয় উল্লাসে উল্লসিত হলেও নাটোর তখনও ছিল অবরুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বৃহত্তর রাজশাহী বিভাগের সেক্টর হেড কোয়ার্টার স্থাপন করা হয়ে ছিল নাটোরের দিঘাপতিয়া গর্ভণর হাউসে তথা বর্তমান উত্তরা গণভবনে । সে জন্য নাটোর হানাদার মুক্ত হয়েছিল পাঁচদিন পরে ২১ ডিসেম্বর।
২১ ডিসেম্বর ১৯৭১ উত্তরা গণভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে পাক হানাদার বাহিনী। আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমাপর্ণের মধ্যে দিয়ে নাটোর মুক্ত দিবসের স্বীকৃতি পায়। ওই দিন নাটোরবাসী  বিজয়ের উল্লাসে আকাশ-বাতাস বিদীর্ণ করে  ছড়িয়ে পড়ে পথে প্রান্তরে।
২৬ মার্চের কালোরাতে ঢাকাসহ সারা দেশে অপারেশন সার্চলাইট চালায় পাকিস্থানী সেনাবাহিনী।  ঢাকার সাথে নাটোর এবং নাটোর থেকে উত্তর বঙ্গের সব জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা থাকার কারণে নাটোরে ২য় হেড কোয়াটার  প্রতিষ্ঠা করেন। সমগ্র উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের যুদ্ধ নাটোর থেকে পরিচালনা করা হতো।
শহরের ফুলবাগানে সিও অফিসে স্থাপিত হয় প্রধান কার্যালয়। এছাড়াও তৎকালীন গভর্ণর হাউস তথা বর্তমান উত্তরা গণভবন, রাণী ভবানী রাজবাড়ী, আনসার ক্যাম্প, পিটিআই এবং নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা কলেজে পাকিস্থান সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধা নবীউর রহমান পিপলু বলেন,শহরের বিভিন্ন প্রান্তে পাকিস্থানী সেনাবাহিনীদের অবস্থান নেয়ায় নাটোর শহর ১৩ এপ্রিলের পর থেকে কার্যক্রম অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ইতোপূর্বে নাটোর টাউন পার্কে খন্দকার আবু আলীর নেতৃত্বে গঠিত সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ এবং নাটোর রিক্রিয়েশন ক্লাব থেকে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। নাটোর শহরে সেনাবাহিনীর শক্ত অবস্থানের কারণে মুক্তিযোদ্ধারা নাটোর ছাড়তে শুরু করেন। এই অঞ্চলের অন্যতম মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এডভোকেট মাজেদুর রহমান চাঁদ বলেন, নাটোরের মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
মুক্তিযোদ্ধা শেখ আলাউদ্দিন বলেন, ১৩ এপ্রিল থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নাটোর শহর পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রনে থাকলেও ১৬ ডিসেম্বর থেকে তারা নিজেদের গুটিয়ে নেয়। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের পর ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন রণাঙ্গন থেকে পাকিস্থানী সেনাবাহিনী নাটোরে ফিরে আসতে শুরু করেন। এর পর নাটোরে আসে মিত্রবাহিনী, আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২১ ডিসেম্বর তৎকালীন গভর্ণর হাউস তথা বর্তমান উত্তরা গণভবনে ১৪১ জন অফিসার, ১১৮জন জি.ও.সি, ৫ হাজার ৪৫০জন সিপাহী এবং এক হাজার ৮৫৬ জন প্যারামিলিশিয়া বাহিনী নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নওয়াব আহমেদ আশরাফ আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণ দলিলে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন মিত্র বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রঘুবীর সিং পান্নু। এ সময় অন্যান্যে মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মিত্র বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল লসমন সিং এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধিনায়ক মেজর জেনারেল নজর শাহ্। ১০ হাজার ৭৭৩টি আগ্নেঅস্ত্রসহ জমা হয় ট্যাংক, মর্টার এবং অসংখ্য সাঁজোয়া যান। এলাকার ওই সময়ের যুবক বর্তমানের ব্যবসায়ী সাদেক খামারু জানান সকালের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে কোন সিভিলিয়নের প্রবেশাধিকার ছিলনা । একই মত পোষণ করেছেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নাটোর  জেলা শাখার প্রাক্তন কমান্ডার আব্দুর রউফ। আত্মসমর্পণের খবর ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। সারাদিন ধরে শহরে চলে বিজয় মিছিল আর মুক্ত আকাশে ফোটতে থাকে গোলা গুলি ও আতোশবাজি। জয়বাংলা শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয় সারা শহর। বিজয়ের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে।
সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ'৭১ এর সভাপতি আশরাফুল হোসেন লালা জানান,২১ ডিসেম্বর নাটোর মুক্ত দিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হয় বিজয় শোভাযাত্রা, ফুলবাগান গণকবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহত্তর রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, বর্তমানে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এমপি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ২১ ডিসেম্বর-নাটোর মুক্ত দিবসকে রেড লেটার ডে হিসেবে অভিহিত করে বলেন, বিজয়ের পর পাঁচদিন ধরে রুদ্ধশ্বাসে প্রতীক্ষার পরে সে দিনের সেই আনন্দ কতই না মহিমান্বিত এবং গৌরবের।

No comments: