বিনা পারিশ্রমিকে ১৫ বছর দায়িত্ব পালন বড়াইগ্রামে কমিউনিটি পুলিশের স্বীকৃতি চায় হতদরিদ্র বাবুল

মো. আব্দুস সালাম ,নাটোর থেকে
নাটোরের বড়াইগ্রামে ব্যস্ততম রাজাপুর বাজারে বিনা পারিশ্রমিকে গত ১৫ বছর যাবত কমিউনিটি পুলিশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন হতদরিদ্র মো.বাবুল হোসেন (৩৫)। তিনি বড়াইগ্রাম উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের রাওতা গ্রামের হাচেন আলীর ছেলে। ২০০৬ সাল থেকে অদ্যাবধি রাজাপুর বাজারের যানজট ও দুর্ঘটনা নিরসনকল্পে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব পালন করে আসছেন। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক পারাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন তিনি। যদিও তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এজন্য নাটোর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার সহ বিভিন্ন দপ্তরে তার স্বেচ্ছাশ্রমের বিষয়ে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন তিনি।
বাবুল হোসেন জানান, ২০০৬ সালে রাজাপুর কলেজের ছাত্র জামরুল ইসলাম রাজাপুর বাজারে সড়ক পারাপারের সময় আমার চোখের সামনে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়। তখন তাকে গুরুতর আহতাবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিতে ও ভর্তি করাতে সহযোগিতা করি। বর্তমানে শারীরিক প্রতিবন্ধী অবস্থায় জামরুল সোনালী বাংকে একজন অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি উপজেলার চান্দাই গ্রামের ছোবাহান সরকারের ছেলে। জামরুলের ওই দুর্ঘটনা দেখে, মানবতার দৃষ্টিতে উদ্দীপ্ত ও অনুপ্রানিত হয়ে সেচ্ছায় মানব কল্যানে, সড়ক দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে আত্মনিয়োগ করি। আর যেন কোন শিক্ষার্থী জামরুলের ন্যায় রাজাপুর বাজারে মহাসড়ক পারাপারেরর সময় দুর্ঘটনায় পতিত না হয় সেজন্য এ কাজ শুরু করি। দীর্ঘ দিন যাবত রাজাপুর বাজারের চৌরাস্তার মোড়ে একজন ট্রাফিক পুলিশের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় আমি দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ বিনা পারিশ্রমিকে সকল যানবাহন পারাপার সহ এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং জনসাধারণের মহাসড়ক পারাপারে সহযোগিতা করে আসছি। তিনি আরও বলেন, রাজাপুর বাজার সংলগ্ন মুলাডুলি রেলগেটে ট্রেন ক্রসিং করার সময় রেলগেট সাময়িক বন্ধ থাকে। তখন মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ঐ সময় রাজাপুর বাজারে শিশু শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক পারাপার দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলে ইতোপূর্বে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে "নিরাপদ সড়ক পারাপার কমিটি" গঠিত হয় এবং সেই কমিটি আমাকে কমিউনিটি পুলিশ হিসেবে কাজ করার দায়িত্ব দেন। কিন্তু সেই কমিটিও আমাকে কোন আর্থিক সহায়তা দেয় না। এছাড়া জাতীয় নির্বাচন, পূজা-পার্বন সহ সরকারী বিভিন্ন কার্য্যাবলী কমিউনিটি পুলিশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকি। তাই আমাকে কমিউনিটি পুলিশের স্বীকৃতি দিয়ে সরকারী তহবিল থেকে বেতন ভাতা প্রদানের জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রির কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।  
প্রতিবন্ধী বাংক কর্মকর্তা মো.জামরুল ইসলাম জানান, ২০০৬ সালে আমি রাজাপুর বাজারে মহাসড়ক পারাপারের সময় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরতর আহত হই। তখন তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেয়া বা চিকিৎসার ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন বাবুল হোসেন। গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান, রাজাপুর কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ তুঘলক, হাইস্কুলের  প্রধান শিক্ষক এবি.এম আশরাফুল ইসলাম স্বপন, ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবি এম কামাল হোসেন ও রাজাপুর বাজার কমিটির কর্মকর্তারা অসহায় বাবুলকে কমিউনিটি পুলিশ হিসেবে স্বীকৃতি দানের জোর দাবী জানিয়েছেন।

Comments